আমরা অধিকাংশই বলতে গেলে এক অসামাজিকতায় লিপ্ত হচ্ছি। খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছি। খারাপকে নৈতিকতা গ্রহণ করে না। কিন্তু আজ আমরা নৈতিকতাই কী জানি না। বৈধ-অবৈধ, সামাজিক-অসামাজিক এসবের ভেদাভেদ বুঝি না। শুধু নিজেদের পক্ষের যুক্তিকেই গ্রহণ করে খারাপকে ভালো জানি, ভালোকেও নিরপেক্ষ ভালো জানি। বিষয়বস্তুটা অন্যকিছু নিয়ে। আমরা অধিকাংশই একজন আমাদের বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি এক ধরনের প্রবল আকর্ষণ অনুভব করি। তার ব্যাপারে সবার থেকে আলাদা অনুভূতি জন্মে। এটাকে আমরা ভালোবাসা বলি। আমি বলবো যারা বলি, তারা হয় মিথ্যাবাদী না হয় মূর্খ। রিলেশন করেন, এমন অনেকেই আছেন। তাদের কাছেই প্রশ্নটি রাখি। আপনাদের সম্পর্কটি কি বৈধ? হয়তো অনেকেই প্রথমেই বলবেন, হ্যা অবশ্যই। এখানে আপনি কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বলেছিলেন বৈধ? - আমি বলবো, আপনার উত্তরটি ভুল। কারণ নারী-পুরুষের একসাথে খোলামেলা চলাফেরার অধিকার যদি থাকতো। তাহলে আমার আপনার অনেক বৈধ প্রেমিক/প্রেমিকাই হতো? এবং প্রত্যেকটা সম্পর্ক বৈধ হতো? তাই নয় কি? তাই, যদি বৈধই হতো, তাহলে আপনার একজন প্রেমিক/প্রেমিকা কেন বলে, তুমি শুধু আমায় ভালোবাসবে? সবাইকে আপনি ভালোবাসতে পারবেন। এটা আপনার মানবিক বৈধতা। কিন্তু সবার সাথে অবাধ মেলামেশা করতে পারবেন না।
ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞাও অনেকেই জানে না। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং একটি আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করে। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতিক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত। অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা, নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব , মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। ভালোবাসায় যৌন চাহিদা গৌণ বিষয়। তাই সহজভাবে বলা যায়, যেখানে যৌন চাহিদা মুখ্য, সেখানে ভালোবাসা গৌণ। তখন সেটা ভালোবাসা না হয়ে, হয়ে যায় মোহ। পাশ্চাত্য দেশে অবাধ যৌনতার বৈধতা আছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে- একটা বৈধতা ছাড়া যৌনতা অসামাজিকতা। বৈধ প্রকৃত পক্ষে সেটাই যার নেতিবাচকতা কম, ইতিবাচকতা বেশি। বিয়েটা হচ্ছে বৈধতা। আর বিয়ের আগে যৌনতায় লিপ্ত হলে, নেতিবাচক প্রভাবটা বেশি পড়বে। তার মানসিক প্রবণতা এমন ধারায় চলে যাবে যেমনটা নেশা করলে হয়। তখন প্রতি মুহূর্তে সে বার বার চিন্তা করবে কিভাবে যৌনতা করা যায়। যার ফলে সমাজে ধর্ষণ বেড়ে যায়। তাছাড়া, বিয়ের পরেও স্বামীস্ত্রীর মাঝে সমস্যা হয়। দুজনের প্রতি দুজনের অনিহা জন্মাতে থাকে। যেখানে যৌনতা মুখ্য সেখানে সংসার করার মতো মানবিক প্রবণতাটা গৌণ হবেই। মদ্দা কথা, বিয়ের আগে যৌনতায় লিপ্ত হলে, তার নেতিবাচক প্রভাবটা বেশি পড়বে। বিয়ের আগে যদি কেউ কিছু যৌনতায় লিপ্ত হয়, সেটা এ কারণে অবৈধ হবে। আর আমরা ভালোবাসার সংজ্ঞায়ও জেনেছি, ভালোবাসায় দৈহিক চাহিদাটা গৌণ বিষয়। কারণ ভালোবাসাটা মানবিক অনুভূতি। কিন্তু, আমরা সত্যিই কি সেই মানবিক অনুভূতির অভিজ্ঞতা নিচ্ছি নাকি দৈহিক যৌনতার? আমরা বর্তমানে শুধুই ভালোবাসা শব্দটার ব্যবহার করে অসামাজিকতা, অনৈতিকতা করছি। করছি- বিয়ের আগে অন্যের হবু বউয়ের ইজ্জত এবং কুমারীত্ব ভক্ষণ। সত্যিই যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে, তাহলে তার কাছে মানবিক অনুভূতিই প্রধান হবে, দৈহিক অভিজ্ঞতা নয়। লোলুপতা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়। যে সম্পর্ক বিয়ের আগে বৈধতাতীত যৌনতার সহায় হয়, সেই সম্পর্কেই বিশৃঙ্খল সৃষ্টি হয়। অথচ আমরা আজ একবিংশ শতাব্দীতে দেখছি ভালোবাসার নামে যৌনতা একটা আর্ট হয়ে গেছে। অথচ এটা যে অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, সেই বিষয়ে কারো দৃষ্টিপাত নেই।
-
লেখাঃ মেহেদী হাসান হাসিব
-
লেখাঃ মেহেদী হাসান হাসিব
0 Reviews:
Post a Comment